বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনেই প্রমাণ হয়েছে যে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ‘দুর্নীতিতে’ সরকারও জড়িত।
তাই ‘নৈতিক’ কারণে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের পদত্যাগ করা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় ফখরুল বলেন, “এতোদিন প্রধানমন্ত্রী ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বলে আসছিলেন, পদ্মাসেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। এখন অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনসহ দশ জন জড়িত।”
“কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, দুর্নীতির গন্ধ পাওয়া গেছে। ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। এই একটি কারণেই এখন প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের পদত্যাগ করা উচিৎ”, যোগ করেন তিনি।
মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান সাংবাদিকদের জানান, কমিশনের অনুসন্ধান কমিটি পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘ঘুষ’ লেনদেনের ‘ষড়যন্ত্রের’ জন্য বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করার সুপারিশ করেছে। অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন মূল্যায়নের পর এই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করবেন তারা।
যাদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে- তাদের নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানালেও তিনি বলেন, “এই সংখ্যা ১০ এর কম।”
আর এদের মধ্যে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের নাম রয়েছে বলেও সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে।
এতে সরকারের দুর্নীতি ফাঁস হয়ে গেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “সৈয়দ আবুল হোসেনকে প্রধানমন্ত্রী দেশপ্রেমিক উপাধি দিয়েছিলেন। আজ তিনি কি বলবেন ?”
আবুল হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমানের নাম প্রতিবেদন থেকে বাদ দেয়ার ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে অভিযোগ করে বিএনপি মুখপাত্র বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, আজ অনুসন্ধান কমিটির সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি দলের বৈঠক রয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে- সৈয়দ আবুল হোসেন ও মসিউর রহমানকে বাদ দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু তাতে কাজ হবে না।”
পদ্মাসেতুর দুর্নীতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ‘ঘনিষ্টজনও’ জড়িত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
‘গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ উপলক্ষে ১৯৯০ এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
দীর্ঘ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর তিনজোটের রূপরেখা অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বিরোধী দল বিএনপিসহ বিভিন্ন সংগঠন এই দিনটিকে ‘গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।
৯ ডিসেম্বরের অবরোধ প্রসঙ্গে
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ৯ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারাদেশে রাজপথ অবরোধ প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল বলেন, আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। দেশের জনগণ আর এই সরকারকে সময় দিতে চায় না।
“যদিও দেশনেত্রী খালেদা জিয়া অনেক সময় দিয়েছেন”, যোগ করেন তিনি।
ওই দিনের কর্মসূচিতে জনগণ সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করবে বলেও দাবি করেন ফখরুল।
অবরোধ কর্মসূচিতে বাা দিলে এর পরিণতি শুভ হবে না উল্লেখ করে দলের মুখপাত্র বলেন, “আমাদের অবরোধ কর্মসূচি হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। কিন্তু এতে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে উস্কানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তার দায়ভার তাদের ওপরই বর্তাবে।”
ইনুকে হুঁশিয়ার
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “১৯৭২-৭৫ সালে এই ইনু সাহেবরা জাসদ সৃষ্টি করে গণবাহিনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করেছিল। তাদের কথায় হাজার হাজার তরুণ তাজা রক্ত দিয়েছে। আজ ইনু সাহেবরা আওয়ামী লীগের সঙ্গী হয়ে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার কথা বলছেন।”
নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মতো এ সরকারকেও নির্দলীয় সরকারের দাবি মানতে বাধ্য করা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রসঙ্গে
বিরোধী দলীয় নেতা যুদ্ধাপরাধীর বিচার চান না- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, “আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই- অবশ্যই বিএনপি যুদ্ধাপরাধীর বিচার চায়। তবে সেই বিচার ন্যায় ও স্বচ্ছ হতে হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিচারের নামে আমরা কোনো প্রহসনের বিচার চাই না।”
ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি ও নব্বইয়ের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে সাবেক ছাত্র নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সাইফুদ্দিন মনি, খোন্দকার লুৎফর রহমান, কামরুজামান রতন, আবুল খায়ের বাবলু, নাজিম উদ্দিন আলম, মীর শরফত আলী সপু, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, শফিউল বারী বাবু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।