পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন বিশ্ব ব্যাংকের পর্যবেক্ষক দল।
বুধবার বেলা সাড়ে ৩টায় সেগুন বাগিচায় দুদক কার্যালয়ে যান লুই গাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পোর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ওই প্রতিনিধি দল।
এক ঘণ্টা আলোচনার পর বেরিয়ে আসেন তারা।
বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টেইন সাংবাদিকদের জানান, তারা এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছেন একটি বৈঠকের জন্য। সেখান থেকে আবারো দুদকে ফিরবেন তারা।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো আলোচনা করছেন তারা। আলোচনা শেষ হলে কিছু বলতে পারবেন।
এর আগে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফা দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিশ্ব ব্যাংক প্যানেলের সদস্যরা। ওই দিনই পদ্মা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান কমিটি প্রতিবেদন দেয় দুদকে।
দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, অনুসন্ধান কমিটি পদ্মা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে, যাতে ‘ঘুষ’ লেনদেনের ‘ষড়যন্ত্রের’ জন্য বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে।
এই প্রকল্পে অর্থ লেনদেনের ‘ষড়যন্ত্র’ হয়েছিল বলেও জানান তিনি।
“অর্থের আদান-প্রদান হয়নি। অর্থ বিনিময়ের জন্য একটি আলোচনা হয়েছিল, যাকে আমরা ষড়যন্ত্র বলছি,” বলেন তিনি।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতির ‘ষড়যন্ত্র’ যে হয়েছিল, সে বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক ও দুদক একমত।
তবে কার কার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে- সেই বিষয়ে মতৈক্য এখনো হয়নি জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “ইনক্লুশন অ্যান্ড এক্সক্লুশনের বিষয়ে আমাদের মধ্যে এখনো মতভেদ রয়েছে।”
এদিনের বৈঠকে ওই মতভেদ দূর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পদ্মা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা সফর করছে বিশ্ব ব্যাংকের পর্যবেক্ষক দল।
তাদের ঢাকায় অবস্থানের মধ্যেই মঙ্গলবার সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক কর্মকর্তারা, প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর যাকে পদত্যাগ করতে হয়।
মঙ্গলবার সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, যিনি প্রকল্পের কাজের বিষয়ে এসএনসি লাভালিনের পক্ষে সুপারিশ করেছিলেন বলে দাবি করেছেন আবুল হোসেন।
কানাডীয় কোম্পানি এসএনসি লাভালিনের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ ওঠার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে ২৯১ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্থগিত করেছিল বিশ্ব ব্যাংক।
সরকার ও তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের পক্ষ থেকে দুর্নীতির অভিযোগ নাকচ করা হলেও অনড় থাকে বিশ্ব ব্যাংক এবং তার ধারাবাহিকতায় গত জুন মাসে ঋণচুক্তি বাতিল করে।
এরপর আবুল হোসেনের পদত্যাগ, প্রকল্পের ইন্টেগ্রিটি অ্যাডভাইজর মসিউর রহমান ও সেতু বিভাগের তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়াকে ছুটিতে পাঠানোসহ সরকারের নানামুখী তৎপরতায় বিশ্ব ব্যাংক সিদ্ধান্ত বদলায়।
তবে দুর্নীতির তদন্ত পর্যবেক্ষণে ওকাম্পোর নেতৃত্বে এই পর্যবেক্ষক দলকে ঢাকায় পাঠায়, যার অন্য দুই সদস্য হলেন টিমোথি টং ও রিচার্ড অল্ডারম্যান।
এই প্যানেলের প্রতিবেদনের ওপরই নির্ভর করছে বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু নির্মাণ, যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি।
0 মন্তব্য:
Post a Comment
আপনার মতামত দিন